আমার আম্মা - Trivia Quiz

আমার আম্মা

প্রসঙ্গঃ আমার আম্মা
দুপুরে খাবার টেবিলে আম্মা আর আমার কথোপকথন
আম্মাঃ ভার্সিটিতে গেছিস কদিন হয়েছে?
আমিঃ এই তো তিন মাস
আম্মাঃ বলেছিলাম প্রেম করলে একটু ভালো দেখে করিস, তাই বলে এত তাড়াতাড়ি!!!
আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম। গলায় ভাত আটকে গেল। কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। হঠাৎ এমন কী হলো!
আমিঃ আম্মা, আমি কিছুই বুঝতে পারছি না, কী বলছ।
আম্মাঃ এই নে তোর প্রেমিকার চিঠি এসেছে। (তখনো মনির ঐ গানটা গায় নি! চিঠি লিখেছে বউ আমার ভাঙ্গা ভাঙ্গা হাতে..)
চিঠি খুলে আমি তো পুরাই অবাক!!! বিনা অপরাধে হাতেনাতে গ্রেপ্তার! আইয়ূব বাচ্চুর একটা গান সম্পূর্ণ লিখে দিয়েছে। “তোমাকে ছাড়া যে বাঁচবো না এর চেয়ে বড় কোনো সত্যি নেই.....প্রতিটি মানুষের নিজস্ব একটা আকাশ আছে, আমার সে আকাশ তুমি......”

কলেজে যাচ্ছি ভর্তি হতে। আম্মা পরিষ্কার বলে দিলো সাবধান! কোনো মেয়ের পাল্লায় পড়বি না, সাবধানে থাকবি, নামাজ-কালাম পড়বি। এভাবেই আম্মার কথামত ঠিকঠাক চলছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলাম ২০০৩ সালের মার্চে। বিশ্ববিদ্যালয়ে যাবার আগে আম্মা বলে দিল, “এতদিন প্রেম করতে নিষেধ করেছি, এখন ভার্সিটিতে যাচ্ছিস যাই করিস একটু ভালো দেখে করিস”! জুন মাসের গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে বাড়ী গেলাম এক মাসের জন্য। এক সপ্তাহের মধ্যেই খাবার টেবিলে ঐ চিঠি পেলাম, আর আমার প্রেমের অগ্রিম অনুমোদন সঙ্গে সঙ্গে জমিদারী প্রথার মতো চিরস্থায়ী বাতিল হয়ে গেলো। আমিও গোয়েন্দাগিরি শুরু করলাম কে সে মহিয়সী? খামটা হাতে নিয়ে পোস্ট কোড খুঁজে বের করলাম, খুলনা। সবুজ কালিতে লেখা চিঠি, মনে পড়লো আমার পাশের রুমের বন্ধু সবুজ কালির কলম কিনেছিল। আম্মাকে আমি আর দাদা (বড় ভাই, জন্মের আগে দাদা মারা গেছে তাই সে ই দাদা/মিজান) বুঝালাম কেউ একজন দুষ্টামি করেছে, কিন্তু আম্মার সন্দেহ মন তো আমাকে জামিন দেয় না। ছুটি শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ঐ সবুজ কলমওয়ালার পাছায় লাথি শুরু করলাম, তখন সে স্বীকার করল এ আকাম এই মহিয়ান করেছে কোনো মহিয়সী নয়, সঙ্গে সঙ্গে আমার লালায়িত স্বপ্নটাও স্বপ্ন রয়ে গেলো।
আমার আব্বা ৫ বারের চেয়ারম্যান। তাই ছোট বেলা থেকেই শুনে আসছি চেয়ারম্যানের ছেলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষে “শ্রেণি প্রতিনিধি” নির্বাচন হয় বেশ ঘটা করে, নির্বাচিত হয়ে মাসের নির্ধারিত টাকা প্রথম ৭ দিনেই খতম করে ফেললাম!! আমার গ্রামের নাম সিংপুর। সিংপুরের অনেক মানুষ থাকে ঢাকায়, তাদের মাধ্যমে আম্মার কাছে খবর পাঠালাম টাকা শেষ, টাকা লাগবে। কদিন পরেই লোক মারফত টাকা পেলাম আর সাথে পেলাম একটা অমিয় বাণী, আম্মা বলেছে “বলে দিয়ো, ঘরের সবার চেয়ারম্যানগিরি করা লাগবে না”

২০০৭ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেনটাইন ডে তে আম্মা আমাকে ফোন দিয়ে বলল, আজকে কি করবি? আমি বললাম, যা করার তো সবুজ কলমওয়ালা করেই দিছে। আম্মা বলল, যা বাইরে থেকে একটু ঘুরে আয়। টিএসসি তে ফিল্ম শো হচ্ছিল, বুলবুল আহমেদের দেবদাস মুভিটা দেখলাম।
২০০৭ সাল বন্ধু দিবসে বিকেলে পাঞ্জাবি পরে হাটতেছি, দুই পাশে শাড়ি পরা দুই বান্ধবী। হঠাৎ শুরু হলো বৃষ্টি, আমাদের হাটা বন্ধ হলো না। হঠাৎ বজ্রপাতের মত আর্বিভাব ঘটল সিংপুরের একজন হকারের। সামনে এসে বলল, ‘মামুন ভাই দেইখ্যালছি”। সাথে সাথে আম্মাকে কল দিলাম, বিস্তারিত বললাম। আম্মা বলল, যা এবারের মতো মাপ, অভিযোগ দিলেও শুনব না।
২০১০ সালের কথা। আম্মা তখন চাঁদপুরে আমার ছোট বোনের কাছে, ওর বেবি হবে। আমি তখন ঢাবির হল ছেড়ে কাজীপাড়ায় মেসে থাকি। আম্মা অনেকদিন ধরেই বলছিল আমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে। বললাম আগামী কাল দুপুর ১ টায় চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হব। ইচ্ছে করেই সকাল ৮ টায় রওয়ানা হলাম, ১১ টায় আম্মা ফোন করল, আমি তখন কুমিল্লার কাছাকাছি। আম্মা বলল কোথায়? আমি মিথ্যে বললাম এখনো রওয়ানা হইনি। ১ টায় বাসার সামনে গিয়ে আম্মাকে কল দিয়ে বললাম, এই যে আম্মা রওনা হলাম। এর পরপরই কলিং বেল টিপলাম, আম্মা দরজা খুলে অবাক.......................।
২০১০ সালের ১৫ এপ্রিল মানে পহেলা বৈশাখ। ঠাকুরগাঁও এসেছি সবুজ কলমওয়ালার বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে। আম্মা তখনও মোবাইলে ম্যাসেজ পাঠাতে পারেনা। শুধু নাম সেইভ করা শিখেছে। ঘুম থেকে ওঠেই দেখি আম্মার নম্বর থেকে ম্যাসেজ এসেছে। লেখা, Shuvo Noboborso। সাথে সাথেই আম্মাকে কল দিলাম। ম্যাসেজ পাঠানো শিখলা কেমনে? আম্মা বলল সাইফুলে শিখাইছে। সাইফুল ভাই হলো আমার ফুপাতো ভাই এবং একই সংগে চাচাতো ভাই। সিংপুরের খুব কম শিক্ষিত লোকই আছে যে সাইফুল ভাইয়ের কাছে প্রাইভেট পড়ে নি। আমাদের গ্রামে আবার জ্বীন, ভূত, প্রেতের সংখ্যা বেশি। ছোটবেলায় উঠতে বসতে মানুষকে জ্বীনে ধরত। জ্বীনে ধরলে অনেক মানুষ জ্বীনের কাছ থেকে তাদের ভবিষ্যৎ বাণী শুনে নিত। একবার একলোক গেলো জ্বীনের কাছে, বলল, আমার ছেলে পড়ালেখা পারে না, কী করব বলে দাও। জ্বীনের সহজ উত্তর, “তোমার ছেলেতো সাইফুলের কাছে প্রাইভেট পড়ে না, পড়ালেখাটা হবে কেমনে?”
একটা কৌতুক বলি.. ফেসবুকে মা আর ছেলের মধ্যে কথোপকথন। ছেলে থাকে হোস্টেলে...
মা: খোকা কেমন আছিস?
ছেলে চুপ হয়ে আছে।
মা: রাতে খেয়েছিস?
ছেলে চুপ হয়ে আছে।
মা: ঠাণ্ডা লাগেনি তো?
ছেলে চুপ হয়ে আছে।
মা: আমি আর তোর বাবা ভাবছি তোকে একটা আইফোন কিনে দেবো?
ছেলে: তাই নাকি!!
মা: না। শুধু চেক করলাম তুই অন লাইনে আছিস কিনা!!
সত্যিই আমরা প্রয়োজন ছাড়া মাকে বেশি পাত্তা দেইনা, মায়ের কদর বুঝিনা। শুধু নিজের প্রয়োজনেই বুঝি। প্রথম যখন বিসিএস দিলাম দুর্ভাগ্যের জন্য হলো না। আমার বন্ধু ম্যাজিস্ট্রেট হলো, আম্মা বলল ওর মা কত ভাগ্যবতী!!! আমার কিছুই হলো না। বেকার হয়ে গেলাম। এর মধ্যে একটা সরকারী চাকরি হলো। পরে ম্যাজিস্ট্রেট হলাম, লাভ কী!!! তিনি জানতে পারলেন না, তিনিও ভাগ্যবতী।
২০১১ সাল ২৩ জানুয়ারি বিকাল ৫টা ১৪ মিনিটে আম্মা ফোন করে বলল তার ভালো লাগছে না, বুকে ব্যথা করছে। এটাই ছিল তার সাথে আমার শেষ আলাপচারিতা। এখন স্বপ্ন ছাড়া তার সাথে আর কথা হয় না।

ছয় বছর আগে এই দিনে আম্মা আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। কৌতুকুতুর ছলে আপনাদের কাছে একটু দোয়া ভিক্ষা চেয়ে নিচ্ছি।
আমি আনলাকি বলেই আম্মাকে নিয়ে লেখাটি কৌতুকুতু নং ১৩ ।

লেখাটি মামুন ভাইয়ের ফেইসবুক টাইমলাইন থেকে সংগৃহীত 

You May Also Like

Brain-Teasing Puzzles

Crossword puzzles

Expressive Micro Poetry

Micro-Poetry

Mind-Boggling Trivia

Trivia

Captivating Fun Facts

Fun Facts

Brain-Teasing Riddles

Riddles

Hilarious Funny Jokes

Funny Jokes

Knowledge-Packed Quiz

Quiz

Informative General Knowledge GK

GK